সুমাইয়া সিকদার অনামিকা, জবি প্রতিনিধি
বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসব সমূহের মধ্যে পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব অন্যতম। সাকরাইন উৎসব মূলত বাঙালিদের পৌষসংক্রান্তি, ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত, বাংলাদেশে শীত মৌসুমের বাৎসরিক উদ্যাপন, ঘুড়ি উড়িয়ে পালন করা হয়। তবে পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সার্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবের রূপ নিয়েছে। বর্তমানে দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙবেরঙ ফানুশে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ।
সাকরাইন ঘিরে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, নয়াবাজার, তাঁতীবাজার, গেণ্ডারিয়া, ধুপখোলা ও সূত্রাপুর এলাকায় ঘুড়ি, নাটাই ও সুতা বেচাকেনার ধুম পড়ে সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই। ভোরের আলো ফুটার সাথে সাথেই পুরান ঢাকার আকাশ ছেয়ে যায় রং-বেরঙের ঘুড়িতে। আকাশে দেখা দিতে থাকে পানদার, চোখদার, বলদার, দাবাদার, পতঙ্গ এবং লেজওয়ালা ইত্যাদি নামের ঘুড়ির আগমন। বাসা-বাড়ির ছাদে কিশোর-কিশোরীদের শুরু হয় হৈ-হুল্লোড়। কার ঘুড়ি কতো উপরে যাবে এই নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। শুরু হয় ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াই।
এদিকে গতকাল রাত থেকেই পুরান ঢাকার অলিগলি রূপ নিয়েছে উৎসবের আমেজে। সাকরাইন উপলক্ষে সব বয়সের তরুণ-তরুণী সেজেগুজে বাহারি অলংকার পরিধান করে সহপাঠীদের নিয়ে যাচ্ছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। দিনভর ঘুড়ি ওড়ানো হয় পুরান ঢাকার অলিগলি, বাসাবাড়ির ছাদে, আয়োজন হয় ডিজে পার্টির। গানের তালে তালে মেতে উঠে তরুণ-তরুণীরা।
এছাড়া ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠাপুলির উৎসব। সন্ধ্যার পর থেকেই আতশবাজি আর লেজার লাইটের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পুরান ঢাকার আকাশ। এ চিত্র পুরান ঢাকার প্রায় প্রতিটি ছাদেই।
স্থানীয় এক বাসিন্দা সুকুমার রায় এ উৎসব নিয়ে বলেন, ‘সাকরাইনের দিন বিকেলে পুরান ঢাকার আকাশে ঘুড়ি দিয়ে কাটাকাটির খেলা উপভোগ করেন সবাই। নানা রঙ আর বাহারি আকারের ঘুড়ি নিয়ে এতে অংশ নেন তরুণ-তরুণীরা। সন্ধ্যা নেমে আসলে উৎসবের আমেজে আসে ভিন্নতা। রঙ বেরঙের আতশবাজি ও ফানুসে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। এসব অনুষঙ্গের সঙ্গে চলে গান-বাজনা এবং নাচানাচি। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ উৎসব।
পুরান ঢাকার বাংলাবাজার এলাকার এক ব্যবসায়ি অজিত কুমার সেন বলেন, ‘সাকরাইন আমাদের পুরান ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্য। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমাদের বাপ- দাদারা এই আয়োজন করে আসছেন। আগে পিঠা বানানো হতো। এখন বাড়িতে পিঠা বানানোর আয়োজনটা কমে গেছে। তবে এখনো সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে থাকেন। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দিনটিতে সকালে পিঠা, মোয়াসহ নানা ধরনের খাবার বিলি করেন প্রতিবেশীদের মাঝে। সাকরাইন উৎসবকে ‘পৌষ সংক্রান্তি’ বা ‘ঘুড়ি উৎসবও’ বলা হয়।